এইভাবে জল পান করে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো…?
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে, আমাদের শরীরের ২/৩ অংশ বা ৬৫-৭০%ই জল। জল আমাদের কোষকে সিক্ত ও সতেজ রাখে। কিন্তু সঠিকভাবে জল পান না করলে উপকারের থেকে ক্ষতি হওয়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।
আমরা মনে করি, আমরা যখন খুশি, যতটুকু খুশি, যেভাবে খুশি জল পান করতে পারি। এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। সঠিকভাবে জল পান না করলে আমাদের নানান সমস্যায় ভুগতে হয়। যেমন বদহজম, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা, পাকস্থলীর সমস্যা, তৈলাক্ত ত্বক, শুষ্ক ত্বক, চুলকানি, ব্রণ, ব্লাক হেডস্, হোয়াইট হেডস্, জয়েন্ট পেইন সহ আরো অনেক সমস্যা। তো জল পান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্যই এই ব্লগ।
তাহলে চলুন, জল পানের ক্ষেত্রে আমরা কী কী ভুল করে থাকি, এর ফলে আমাদের কী কী সমস্যায় ভুগতে হয়, আর জল পানের সঠিক নিয়মগুলোই বা কী কী তা জেনে নেওয়া যাক।
খাবার খেতে খেতে বা খাওয়া শেষ করেই জল পান করা
আমাদের প্রায় সকলেরই খাবার খেতে খেতে বা খাওয়া শেষ করার পরেই গ্লাস ভর্তি করে জল পান করার অভ্যাস আছে। ছোটবেলা থেকেই আমরা এই অভ্যাসের সাথেই বড় হয়েছি। কিন্তু এটা আমাদের জন্য মোটেও ভালো নয়। আমরা যখন খাবার খাই তখন আমাদের পাকস্থলীতে পাচকরস নিঃসৃত হয়। পাচকরস, পরিপাক বা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। এই পাচকরস খুবই অম্লীয় (Acidic) হয়ে থাকে যা খাদ্যকে ভেঙে হজম করতে সাহায্য করে। কিন্তু খাবার সময় বা খাওয়ার পর জল পান করলে এই পাচকরসের ঘনত্ব পাতলা বা লঘু হয়ে যায়। এই কারণে খাদ্য ঠিক মত হজম হতে পারে না। যে বা যারা খাবার সময় অধিক পরিমাণে জল পান করে, খুব সম্ভাবনা তার অজীর্ণ বা বদহজম জাতীয় নানান সমস্যা আছে।
ফ্রীজের ঠান্ডা জল পান করা
এই অভ্যাসটাও আমাদের অনেকের মধ্যে দেখা যায়। যখন তখন ফ্রীজের ঠান্ডা জল পান করা। আর বাইরে থেকে এসে বা গরমের সময় হলে তো কথায় নেই। এটাও কিন্তু একটা মারাত্মক ভুল। কি অবাক হচ্ছেন!
এর কারণ হচ্ছে যে আমরা যখনই কোনো কিছু খাই তখন তা আগে আমাদের শরীরের তাপমাত্রার সাথে Adjust হতে হয়। তারপর ধীরে ধীরে তা হজম হয় বা দেহের কাজে লাগে। যখন ঠান্ডা জল পান করা হয় তখন তাকে শরীরে কাজে লাগানোর উপযোগী তাপমাত্রায় আনতে অনেক শক্তি খরচ হয়। আবার ঠান্ডা জল পেটে গিয়ে খাদ্যকে অনেকটা শক্ত করে দেয়। ফলে তা পাচন হতে অনেক সমস্যা হয়। তাই ঠান্ডা জল পান করলে দুর্বলতা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে।
দাঁড়িয়ে জল পান করা
হাটতে হাটতে, চলতে চলতে জল পান করা তা যেন আজকাল এক কালচার এ পরিণত হয়েছে, তাই না?
কিন্তু এভাবে জল পান করতে গেলে আমাদের নার্ভ সিস্টেমে এর প্রভাব পড়তে পারে। অনেক সময় দাঁড়িয়ে জল পান করার কারণে জল অন্ননালীতে না গিয়ে শ্বাসনালীতেও চলে যেতে পারে। ফলে বিষম খাওয়া বা অনেক সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
বোতলে করে জল পান করা
এখন নিশ্চয় বলবেন যে, আপনার দেখি সবভাবেই জল পান করা নিয়ে সমস্যা।
আজকাল জল পান করার জন্য আমরা বোতলই প্রিফার করি।
বোতলে করে জল পান করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জল পান করি আমরা। বোতলে করে এভাবে জল পান করলে নার্ভ সিস্টেমে প্রভাব পড়া, বিষম খাওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই, সাথে আরো কিছু সমস্যা আছে। এভাবে জল পানের সময় সাধারণতই দ্রুত জল পান করা পড়ে থাকে। এতে করে কিডনি ভালোভাবে জলকে ফিল্টার করতে পারে না। শুধু তাই নয়, এভাবে জল পান করলে মুখের ভিতর দিয়ে নানা ধরনের গ্যাস, বাতাসে থাকা জীবাণুও পেটে চলে যেতে পারে। এর ফলে অনেক সময় গ্যাস, জয়েন্ট পেইনের মত সমস্যা হতে পারে।
কোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করার সময় জল পান করা
যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করার সময় বা পরিশ্রম করার পর আমাদের ভীষণ পিপাসা পায়। আবার পরিশ্রমের সময় ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে জল বেরিয়েও যেতে থাকে। যার কারণে আমরা গ্লাস ভরে ঠান্ডা জল পান করি অধিকাংশ সময়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। পরিশ্রম করার সময় আমাদের দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকে, খুব দ্রুত রক্ত চলাচল করে ও হার্টবিট বেশি থাকে। তাই পরিশ্রমের ফাঁকে ফাঁকে এভাবে জল পান করলে দেহের তাপমাত্রা ওঠানামা করতে থাকে ও হার্টবিটে তারতম্য হয়। তাই এ সময় খুব বেশি পরিমাণে জল পান করা একদমই উচিত নয়। পরিশ্রমের সময় পিপাসা পেলে শুধুমাত্র গলা ভিজতে যতটুকু জল লাগে ততটুকুই জল পান করাই শ্রেয় । আর পরিশ্রমের পর একটু জিরিয়ে নিয়ে (দেহের তাপমাত্রা ও হার্টবিট স্বাভাবিক হলে) তারপর জল পান করা উচিত।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক জল পানের ক্ষেত্রে আমাদের কী কী করা উচিত আর কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত
আমাদের প্রত্যেকেরই পরিমিত জল পান করা উচিত। বয়স, লিঙ্গ, পরিশ্রমের ধরণ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আমাদের জলের পরিমান নির্ধারিত হয়। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রত্যেকদিন ২.৫-৩ লিটার বা সাধারণ মাপের একটি গ্লাসের ৮-১২ গ্লাস জল পান করা উচিত। কেউ যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করে, গরমের সময়, এসকল ক্ষেত্রে জলের পরিমান সামান্য বাড়ানো যেতে পারে। এরচেয়ে কম জল পান করলে শুষ্ক ত্বক, চুলকানি, ব্রণ, ব্লাক হেডস্, হোয়াইট হেডস্ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত জল পান করাও ঠিও নয়। এতে মাথা ধরা, রক্তে সোডিয়ামের ঘনত্ব কমে যাওয়া, কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ পড়া, ঘনঘন বাথরুম পাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
[ ঠোঁট শুষ্ক, প্রস্রাবের রঙ হলুদ, প্রস্রাবের পরিমান অল্প, প্রস্রাবে গন্ধ ইত্যাদি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার হয়তো জলের ঘাটতি পড়ছে।]
- একবারে কখনোই ২০০-২৫০ ml এর বেশি পরিমানে জল পান করা উচিত নয়। কারণ, একবারে বেশি জল পান করলে কিডনি তা ভালোভাবে ফিল্টার করতে পারে না।
- খাবার খাওয়ার ৩০-৪৫ মিনিট আগে ও পরে জল পান করা উচিত। (খাওয়ার পর জল পান না করে থাকতে কষ্ট হলে শুধুমাত্র গলা ভিজতে যতটুকু জল লাগে ততটুকুই জল পান করা যেতে পারে) এতে করে খাবার খুব সহজেই হজম হয়। আর দুইবার জল পানের সময়ের মধ্যে অন্তত ৩০-৪৫ মিনিটের বিরতি থাকা উচিত।
- জল সবসময় বসে, গ্লাসে করে ও ধীরে ধীরে পান করা উচিত। জল অল্প পরিমানে মুখে নিয়ে ৩/৪ সেকেন্ড মুখের মধ্যে ঘুরিয়ে তারপর পান করতে হয়। এতে মুখের লালা ভালোভাবে পেটে পৌঁছাতে পারে ও পাচনক্রিয়া সহজ হয়।
[ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসি মুখে এভাবে ১/২ গ্লাস জল পান করা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।]
- জল কখনোই ঠান্ডা পান করা উচিত নয়। জল সবসময় নরমাল (Room Temperature) বা হাল্কা উষ্ণ পান করা উচিত।
[ অনেক সময় খাবার পর নিয়মিত হাল্কা উষ্ণ জল পান করার ফলেই বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় নানান সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।]
- রাতে বেশি জল পান করা ঠিক না। এতে করে রাতে বাথরুম চাপে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আবার যেকোনো সময় বাথরুম সেরে আসার পরেই জল পান করা ঠিক নয়। অন্তত ১৫-২০ মিনিট পর জল পান করা যেতে পারে। এতে করে কিডনি কিছুটা বিশ্রামের সময় পায়।
[ জলের যত চাহিদা তা দিনের ভিতরেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।]
তাহলে, এ ব্যাপারগুলো জানার পরেও যদি অভ্যাস সেই একি রয়ে যায় তাহলে এতো কষ্ট করে পড়াই বৃথা। তাই আজ থেকেই নিজের জল পানের অভ্যাসে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন, সঠিকভাবে পানি পান করুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Writer–
Chinmoy Dhar Shuvo
Head of Content Writing Department
Requin BD
5 Comments
Rocky
January 13, 2023
Great post
Joy
January 13, 2023
Great post
Refait hossain
January 14, 2023
Thanks for the information
Rabbi Hossain
January 16, 2023
Good information
Md Abirus Sabir
January 25, 2023
❤️❤️