একটোপিক প্রেগন্যান্সি: কি হবে পরিনতি?

প্রেগন্যান্সি প্রত্যেক জীবের একটি সাধারন প্রক্রিয়া। জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তাই মানবক্ষেত্রেও একটি সাধারন ক্রিয়ার মাধ্যমে এটি সম্পন্ন হয়। কিন্তু কেমন হবে, যদি প্রেগন্যান্সি হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুর কারন। আজকে আমরা জানব কিভাবে অস্বাভাবিক গর্ভধারন মায়ের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

স্বাভাবিক গর্ভধারন বলতে আমরা বুঝি শুক্রানু ও ডিম্বানু মিলিত হয়ে উৎপন্ন জাইগোট ফেলোপিয়ান টিউব অতিক্রম করে জরায়ুগাত্রে প্রতিস্থাপন হয়। কখনও কি ভেবে দেখেছেন, জটিলতাবশত জাইগোট জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত না হয়ে অন্য কোথাও প্রতিস্থাপন হলে কি হতে পারে? সেটা কিন্তু মোটেও স্বাভাবিক গর্ভধারন হবে না। এই অবস্থাকে বলা হয় অস্বাভাবিক জটিলতাপূর্ন গর্ভধারন, মেডিকেলের ভাষায় Ectopic Pregnancy. এ ধরনের গর্ভধারনে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ফিটাস ফেলোপিয়ান টিউবেই প্রতিস্থাপিত হয়। তখন তাকে Tubule Pregnancy ও বলা যায়। তবে শুধু ফেলোপিয়ান টিউব নয়, পেটের যেকোনো জায়গায়ই ফিটাসের প্রতিস্থাপন হতে পারে। জরায়ুর বাইরে যেখানেই প্রতিস্থাপন হোক না কেন, সেখান থেকেই মারাত্নক জটিলতার সৃষ্টি হয়।

 

পাঠক ভাবতে পারেন, ফেলোপিয়ান টিউব তো জরায়ুর সাথেই যুক্ত, তাহলে সেখানে ফিটাস প্রতিস্থাপন হলে কি সমস্যা? আসলে ভ্রূনকে রাখার মতো জায়গা ও সরবরাহের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অন্যান্য সিস্টেম ফেলোপিয়ান টিউবে, এমনকি পেটের অন্য কোথাও নেই। এটি শুধু জরায়ুর জন্যই প্রযোজ্য। বরং পরিস্থিতি খারাপ হলে ভ্রূন বৃদ্ধির সাথে সাথে টিউব ফেটেও যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে তীব্র ব্যাথা সহ অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরন শুরু হয়ে যাবে। অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গেলে রোগীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। তাই এই জটিলতাকে স্বাভাবিক নেয়া একদমই উচিত নয়। শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে শুরু থেকেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া দরকার।

একটোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় গর্ভধারনের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি কিছু শারীরিক লক্ষনও প্রকাশ পায়। যার মধ্যে কয়েকটি হলো:

১. রক্তক্ষরন হয় যা কিছুটা অস্বাভাবিক লাগে

২. পেলভিক সার্ফেসে প্রচন্ড ব্যাথা, যা পরে ঘাড় ও কাঁধেও অনুভূত হতে পারে

৩. ব্যাথার সঙ্গে বমি বমি ভাব

৪. দুর্বল অনুভব হওয়া

৫. পেটে টান ধরা

৬. মাথা ঝিমঝিম করা

লক্ষন থাকলেও একটোপিক প্রেগন্যান্সি নিজে শনাক্তকরন সম্ভব নয় ৷ সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে সেখানে রোগীর পেলভিক এরিয়া ও আল্ট্রাসাউন্ড চেক করে থাকেন এবং কোনো বাড়ন্ত ভ্রুন আছে কিনা খুঁজতে থাকেন। Human Chorionic Gonadotropin (HCG) এর মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম ও রক্তে প্রজেস্টেরনের মাত্রা কম হলে একটোপিক প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে।

যদি এ সমস্যার কোনো কারন পাওয়া যায় না, তবুও ডাক্তাররা কিছু সুনির্দিষ্ট কারনকে একটোপিকের জন্য দায়ী করেন:

১. সংক্রমন বা প্রদাহের কাটনে ফেলোপিয়ান টিউব আংশিক বা পুরোপুরি ব্লক হলে

২. জন্মনিয়ন্ত্রনকারী ইনট্রাউটেরাইন ডিভাইস (IUD) ব্যবহারের প্রবনতা থাকলে

৩. Pelvic Inflammatory Disease (PID) থাকলে

৪. জন্মগত ত্রুটি থাকলে

৫. পূর্বে পেলভিক সার্জারির রেকর্ড থাকলে

৬. STD থাকলে

এর পাশাপাশি একটোপিক প্রেগন্যান্সির কিছু Risk Factor ও শনাক্ত করা হয়েছে:

১. মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি হলে

২. পূর্বে অ্যাবোরশনের রেকর্ড থাকলে

৩. পেলভিক এরিয়ার অস্ত্রোপচার হলে

৪. ধূমপানের অভ্যাস থাকলে

৫. ফার্টিলিটি সম্পর্কিত চিকিৎসা বা ঔষধ গ্রহন করলে

৬. পূর্বে একটোপিক প্রেগন্যান্সির রেকর্ড থাকলে

 

শুরুতে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করলে এ রোগের সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে চিকিৎসক ২ ধরনের উপায় অবলম্বন করেন: 

১. ঔষধ গ্রহন

২. অপারেশন

প্রথম উপায়ের ক্ষেত্রে, ডাক্তার রোগীকে Methotrexate মেডিসিনের পরামর্শ দেন যা ফেলোপিয়ান টিউবে বাড়ন্ত ভ্রুনের বিকাশ বন্ধ করতে সাহায্য করে। এভাবেই একসময় তা শরীরের সাথে মিশে যাবে এবং ফেলোপিয়ান টিউবও সুস্থ থাকবে।

২য় উপায়ের ক্ষেত্রে Laparoscopy এর সাহায্য নেয়া। এই প্রক্রিয়ায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাভির কাছাকাছি জায়গায় খুব ছোট অংশ কেটে ভ্রুন অপসারন করা হয়। এখানে ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য ছোট ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। একটোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসায় একে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পদ্ধতি ধরা হয়। ভ্রুন এর বৃদ্ধি ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কখনও কখনও পুরো টিউবটি ও অপসারন করতে হতে পারে।

যদি এরকম পরিস্থিতিতে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়, তবে রোগী আবারও সফলভাবে গর্ভধারন করতে পারবে। তাছাড়া ফেলোপিয়ান টিউবের অবস্থানের উপরও গর্ভধারন নির্ভর করে। যদি কোনো কারনে দুইটা ফেলোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত অথবা একটা টিউব কেটে বাদ দেয়া হয়েছে এমন হয়, তখন পুনরায় গর্ভধারন করা কঠিন হয়ে যায় এবং পরে আবার একটপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকিও থেকে যায়। তাই গর্ভধারনে জটিলতার সম্মুখীন হলে শুরুতেই ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া অতীব জরুরি।

Writer,

Somaiya Afrin Eva Khondokar

Intern, Content Writing Department

Requin BD

2 Comments

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *