কেমন আছো…?? ভালো আছো তো…??

আচ্ছা, আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কেমন আছেন, এর উত্তরে আপনি কি বলবেন? যদি ভালো থাকেন তাহলে নিশ্চয় বলবেন ভালো আছি। আর যদি কোনো সমস্যায় থাকেন তাহলে হয়তো বলবেন ভালো নেই কিংবা এই সমস্যায় আছি। কি তাই তো? কিন্তু বাস্তবিকতা বেশ ভিন্ন। কেমন আছো এর উত্তরে যারা বলে ভালো আছি, তাদের অধিকাংশই বাস্তবে ভালো নেই।

যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের মন খারাপ করে দেয়। এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই মন খারাপের মাত্রা কিংবা স্থায়িত্ব যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন সেটিকে বলে Depression.

 

আমরা অধিকাংশই কোনো না কোনো কারণে মানসিক অবসাদ বা Depression এ ভুগি। আপনার আসেপাশে, আপনার পরিচিত এমন অনেকেই আছে যারা এই Depression এর ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। হতে পারে আপনিও এই পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন। এমন নয় যে Depression এ খালি বড়রাই ভোগে। বর্তমানে অসংখ্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও Depression এ ভুগছে। Depression এ ভোগার বেশ কিছু কারণ আছে।

যেমন:

  • ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানান সমস্যা
  • পড়াশোনা বা কাজের অতিরিক্ত চাপ
  • অতীতের স্মৃতি বা ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা
  • কাছের কোনো মানুষ বা প্রিয় কিছু হারানোর কষ্ট
  • পূরণ না হওয়া কোনো ইচ্ছা বা ভেঙ্গে যাওয়া কোনো স্বপ্ন বা ব্যার্থতা
  • অসহায়তার অনুভূতি বা একাকীত্ব
  • মূল্যহীনতা বা গুরুত্ব না পাওয়া
  • নিন্দা বা সমালোচনা
  • পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা বা অলসতা

 

ইত্যাদি কারণে এই মানসিক অবসাদ বা Depression আসতে পারে। বিরূপ পারিপার্শ্বিক অবস্থা কিংবা নিজের নেতিবাচক মানসিক জগতও Depression এর কারণ হয়ে উঠতে পারে। অনেকসময় এমনও হয়, যে Depression এ ভুগছে সে নিজেই জানে না যে সে কেন Depressed.

এটা মোটেও কোনো সাধারণ মনখারাপ নয়। এটা এমন নয় যে কিছুক্ষণ মনখারাপ থাকলো আবার সব ঠিক হয়ে গেল। এটা চলতে পারে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছরও। আমরা অনেকেই এটা জানিনা বা মানতে চাই না যে এটাও একপ্রকার মানসিক রোগ। এর জন্যেও ডাক্তার দেখাতে হয়, চিকিৎসা নিতে হয়। বেশ কিছু লক্ষণ দুই সপ্তাহ বা তারও দীর্ঘ সময় দেখা দিলে একজন ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া যায়।

যেমন:

  • মন অশান্ত থাকা, মন খারাপ থাকা, মনমরা হয়ে থাকা।
  • কোনো কিছুতে আনন্দ না পাওয়া, প্রিয় কাজগুলোকেও নিরানন্দময় মনে হওয়া।
  • কাজের ক্ষেত্রে অনীহা, সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতে চাওয়া।
  • পারিবারিক কাজ ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অনীহা।
  • সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করা, নিজেকে ছোট করে দেখা।
  • ছোট কোনো বিষয়ের ব্যর্থতাকেও বড় করে দেখা।
  • নিজেকে অপরাধী মনে করা।
  • ক্রমাগত দুঃখিত, উদ্বিগ্ন থাকা বা মেজাজ খারাপ থাকা।
  • হতাশা বা নিন্দা, অপরাধবোধ, মূল্যহীনতা বা অসহায়তার অনুভূতি।
  • মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, কোন কিছু মনে রাখতে না পারা বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা।
  • ঘুম না হওয়া আবার অস্বাভাবিক বেশি ঘুম হওয়া।
  • খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া, আবার খাওয়া অস্বাভাবিক অনেক বেড়ে যাওয়া। খাওয়ার সময় তাড়াহুরা করা, খাবার শেষ না করা।
  • একদম চুপচাপ হয়ে যাওয়া কিংবা কথা অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া। অনেকসময় নিজে নিজেই কথা বলতে থাকা।
  • সবকিছুতেই অস্থিরতা বা বিরক্তিভাব।
  • অনেকসময় বাঁচতে ইচ্ছা না হওয়া বা বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।

Depression এ ভোগা কারো সাথে যেই ব্যবহারগুলো কখনোই করা উচিত নয়-

আমরা অধিকাংশই এই মানসিক অবসাদ বা Depression কে খুবই হালকাভাবে নিয়ে থাকি। এইজন্য অনেকেই আমরা এটাকে গুরুত্ব দিই না। অনেকেই আবার এই নিয়ে হাসিঠাট্টা, মজা করি। আমরা অনেকেই বলি বা মনে করি, এত সামান্য ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ! অনেকসময় তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে তাদেরকে বকাঝকা বা খারাপ আচরণ করি। আমাদের এই ধরনের আচরণ থেকে বাচ্চারাও ছাড় পায়না। যারা এই ধরনের মনোভাব পোষণ করেন বা যারা এই ধরণের আচরণ করেন তাদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে কারো প্রতি এই ধরনের আচরণগুলো করে নিজের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিবেন না। হতে পারে আপনার কাছে ব্যাপারটা খুবই সামান্য। কিন্তু যে বা যারা এই পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যায় তাদের কাছে এটা মোটেও সামান্য ব্যাপার নয়। এটা তারাই বুঝতে পারবে যে বা যারা এই ধরনের পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছে বা কখনো গিয়েছে। অতি সামান্য কারণও তার কাছে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আর তার ওপর আপনার ওই ধরনের ব্যবহারের কারনে তার মনের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। সে মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। গুরুত্ব না দেওয়া, কাউকে নিয়ে মজা করা, সমালোচনা করা ইত্যাদি কারনে অনেকসময় দেখা যায় Depressed নয় এমন কোনো ব্যক্তিও এই ধরনের ব্যবহারের কারনে Depression এ চলে যায়। Depression এর ফলে অনেকেই উন্মাদ পর্যন্ত হয়ে যায় কিংবা অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। তাই কখনোই কারো সাথে এই ধরনের বাজে আচরণগুলো করবেন না।

যে Depression এ ভুগছে তার সাথে যেমন আচরণ করবেন-

যারা এই ধরনের মানসিক চাপ বা মানসিক অবসাদের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে অবহেলা বা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। তাদের সমস্যা যেমনই হোক না কেন, তাদেরকে গুরুত্ব দিন, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। তারা যদি কিছু বলতে চায়, তাহলে তাদের কথা শুনুন, তাদের যথাসম্ভব Mental Support দিন। হতে পারে এতে করেই অনেকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

এবার যে বা যারা এই ধরনের পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন বা যাবেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা-

  • যদি সত্যিই কখনো আপনার সাথে এমন হয়, যদি কখনো মনে হয় আপনি Depression এ ভুগছেন, স্বাভাবিক থাকতে পারছেন না বা নিজেকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না তাহলে ব্যাপারটাকে হালকাভাবে নিবেন না। অবশ্যই একজন ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন আছে।
  • নিজেকে যথাসম্ভব এমন কিছু Creative কাজে ব্যাস্ত রাখুন যে কাজগুলো করতে আপনার ভালো লাগে।
  • অনেক সময় অলসতার কারণেও মানসিক অবসাদ লাগতে পারে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
  • নিজের মনের কথাগুলো কখনোই মনের ভিতর রাখবেন না। যদি এমন কেউ থাকে যে আপনার খুব কাছের, যে হয়ত আপনার কথা শুনবে, আপনার অনুভূতি বুঝবে, আপনাকে বাস্তবিক অর্থেই Support করবে, এমন কারো সাথে আপনার কথাগুলো শেয়ার করতে পারেন। তবে সবথেকে ভালো হয় নিজের মনের কথাগুলো লিখে ফেলবেন। মনে যা আসে তাই লিখে ফেলবেন। দেখবেন অনেক হালকা লাগবে। পরে যদি মনে হয় তো লেখাটি নষ্ট করে ফেলতে পারেন।
  • আপনার সমস্যা নিয়ে You Tube এ লিখে সার্চ করে কিছু ভিডিও ও দেখতে পারেন। এই বিষয়ে বইও পড়তে পারেন। পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো দেগে রাখবেন। আপনার কাজে লাগতে পারে বা আপনাকে এই অবস্থা থেকে বের করতে সাহায্য করতে পারে বা আপনাকে মোটিভেট করে এমন কিছু কথা কোনো কাগজে বড় করে লিখে আপনার রুমের দেয়ালে লাগিয়ে দিতে পারেন (যেন আপনার চোখে পড়ে)।

Depression ব্যাপারটা এখন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন ছোট ছোট বাচ্চারাও Depressed হচ্ছে। তাই সকলে এই ব্যাপারে সচেতন হোন, নিজে ভালো থাকুন, খুশি থাকুন এবং বাকিদেরকেও খুশি রাখার চেষ্টা করুন, গুরুত্ব দিন। হয়তো এতে করেই অনেকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে পারবে।

Writer

Chinmoy Dhar Shuvo

Head of Content Writing Department

Requin BD

6 Comments

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *