বৃহস্পতি গ্রহ বা জুপিটার- সৌরজগতের বৃহৎ গ্রহ হিসেবে পরিচিত যার অবস্থান পঞ্চমে। পরিষ্কার আকাশে রাতের বেলা টেলিস্কোপে খেয়াল করলে দেখা যাবে জ্বলজ্বল করা একটি আলোক বিন্দু, যার পাশে অবস্থিত আরও তিনটি ক্ষুদ্রবিন্দু। ঐ ক্ষুদ্রবিন্দুগুলোই বৃহস্পতির উপগ্রহ। গ্রহরাজ খ্যাত বৃহস্পতি গ্রহ এতই বড়, ইচ্ছা করলে এর ভেতরে পৃথিবীসম ১০০০ টি গ্রহ রেখে দেয়া সম্ভব। তাহলে বৃহস্পতি গ্রহ কি হতে পারে ভবিষ্যৎ মানব উপযোগী বাসস্থান?
বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন- চারটিকে একত্রে জোভিয়ান জগৎ বলা হয়। এটি ‘জুপিটার’ শব্দের বিশেষন রূপ। এদের আরেকটি নাম হচ্ছে ‘গ্যাস দানব’। জুপিটারের অর্থ ধরা হচ্ছে “আকাশের পিতা”। সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮৪ কোটি কিলোমিটার এবং পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ কোটি কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। গ্রহটির পুরো বায়ুমন্ডল গ্যাসের মেঘাবৃত, যার তাপমাত্রা -১২০° সেন্টিগ্রেডেরও কম। ধারনা করা হয় গলিত সিলিকেট দ্বারা বৃহস্পতির সেন্টার পার্টিকেল তৈরি। মজার ব্যাপার এই যে, সেন্টার পার্টিকেলের আকার হিসেবে এটি প্রায় পৃথিবীর সমান। কেন্দ্রের তাপমাত্রাও কিন্তু কম নয়-৩০ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। অর্থাৎ সূর্যের পৃষ্ঠদেশের প্রায় ৫ গুন অধিক। গ্রহটির প্রাথমিক উপাদান হাইড্রোজেন ও সামান্য পরিমান হিলিয়াম গ্যাসের মিশ্রন রয়েছে। এর বিভিন্ন অংশের বায়ুমন্ডলে ঝড়ো পরিবেশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর ফলে গ্রহতে তৈরি হয়েছিল Great Red Spot.
বিজ্ঞানীদের জানা মতে সপ্তদশ শতাব্দী থেকে বৃহস্পতি গ্রহে এই ঝড় বয়ে চলেছে একটানা, কোনো অবকাশ ছাড়া। শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড এবং দুর্বল লেয়ার দ্বারা গ্রহটি আজও ঘিরে আছে। তাছাড়া গ্রহটিকে ঘিরে আছে ৭৯ টি উপগ্রহ- আইয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো, থেমিস্টো, লেডা, হিমালিয়া, লিসাথিয়া, মেটিস, অ্যাড্রাসিয়া, ডিয়া, কার্পো, এলারা ইত্যাদি। শুরুতে উপগ্রহের সংখ্যার দিক দিকে শনি গ্রহ এগিয়ে থাকলেও (৮৩ টি) সম্প্রতি আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির কক্ষপথে আরও ১২ টি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। ফলে উপগ্রহের হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতি এখন এগিয়ে। মোট উপগ্রহ সংখা দাঁড়ায় ৯১ টি। আমেরিকার “Minor Planet Center” এর তথ্যানুসারে, ১২ টি উপগ্রহ আকারে অনেক ক্ষুদ্র।
অনেকের মতে, জুপিটারে তাপমাত্রা মাঝারি পর্যায়ে এবং অক্সিজেন, পানি প্রভৃতির কারনে পৃথিবীর মতো এটিও বসবাসযোগ্য হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি বিভ্রান্তিকর ভাবনা। পৃথিবীর পরিবেশের সাথে ব্যাপক তারতম্য যদি না-ই বা থাকত, তবে অনেক আগেই সেখানে প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া যেত। পৃথিবীর প্রানীরা পৃথিবীর সাথে সম্পূর্নরূপে অভিযোজিত। যখন কোনো পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না, তখনই সেই সম্পূর্ন জাতি বিলুপ্তির পথে চলে যাবে।
শারীরিক ও রাসায়নিক বিভিন্ন দিক থেকে পৃথিবীর জীবেরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। তাই যদি ভিনগ্রহের প্রানের অস্তিত্ব মেলে, তা যে আমাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে এমন ভাবার কারন নেই। আবার তারা যে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, এমনটা ভাবারও কোনো কারন নেই। ভূ-মন্ডল, আবহাওয়া প্রভৃতি বিবেচনা করলে তাদের মধ্যে আরও নতুন বৈশিষ্ট্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু এখনও তা আমাদের কল্পনার মধ্য সীমাবদ্ধ আছে। বিভিন্ন মুভিতে ভিনগ্রহের প্রানী হিসেবে দেখানো হয় পাতলা চামড়ায় আবৃত অ্যান্টেনাযুক্ত হাত-পা ওয়ালা জীব যারা সিগন্যাল বা অদ্ভুত শব্দের দ্বারা যোগাযোগ রক্ষা করে। এটি যদি বৃহস্পতি গ্রহের ক্ষেত্রে বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যাবে হাইড্রোজেন, মিথেন, পানি ও অ্যামোনিয়ার সমৃদ্ধ গ্রহটিতে কোনো শক্ত পৃষ্ঠ নেই। মেঘাবৃত আবহমন্ডল থেকে পরীক্ষাগারের মতো জৈব অনু পৃষ্ঠে পতিত হচ্ছে। গভীরে প্রচন্ড উত্তপ্ত থাকার কারনে সেখানের একটা প্রানীকে তার নিজেকে ঝলসানো ও পড়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ অবস্থায় তাদের ‘ডাকব সিন্কার’ বলা যায়। আবার, ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এর মধ্যে নিজেকে পুনরুদ্ধার না করতে পারে এক সময় তা নির্বংশ হয়ে যাবে এবং গ্রহে প্রানের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। তাই আসলে সেখানে প্রানকাঠামো ও সুরক্ষার উপায় এভাবে বিবৃত করা সম্ভব নয়।
বৃহস্পতি গ্রহে কল্পিত প্রানী ডাকব সিন্কারের মতো ফ্লোটারদেরও কল্পনা করা যায়। এরা হবে বেলুনের মতো, সূর্যের আলো ও বায়ুমন্ডল থেকে নিজেরা তৈরি হবে, জৈব অনু হবে খাদ্যদ্রব্য। কিছুটা পৃথিবীর উদ্ভিদের শক্তি অর্জনের মতো কার্যকলাপ। সাল্পটার ও সাগান -এর কল্পনামতে, ফ্লোটাররা কিলোমিটার থেকে কিলোমিটার প্রশস্ত হবার ক্ষমতা রাখবে। হতে পারে তা পৃথিবীতে থাকা তিমির চেয়েও বড়, শহরের ন্যায়! এরা এতটাই হালকা হবে যে সামান্য গ্যাসীয় পদার্থের আঘাতে ছুটে যাবে রকেটের গতিতে। চামড়ায় থাকবে অভিযোজনে সক্ষম পরিবর্তনশীল বিন্যাস। আরেক ধরনের প্রানী বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন, যাকে ‘হান্টার’ হিসেবে নামকরন করা হয়। এরা হবে চতুর ও দ্রতগামী।
যদি বলা হয় বৃহস্পতিতে প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে, তার মানে এই নয় সেখানে মানুষের বসবাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে। পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব টিকে থাকার মূল কারন অভিযোজন। যেহেতু সার্বিক বিবেচনায় বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর জীবদের অভিযোজন প্রায় অসম্ভব, তাই সেখানে বসবাস নিতান্তই কল্পনা মাত্র। সেখানে কখনও প্রানের অস্তিত্ব মিললেও তা সেই আবহাওয়ার অনুকূলেই যাবে, পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
Writer,
Somaiya Afrin Eva Khondokar
Intern, Content Writing Department
Requin BD
1 Comments
KageSaili
November 15, 2024
AI ECG performed best at the pulmonary valve position, with AUC 0 priligy But for about four years, I was tracking my own cycles, doing LH kits, just trying to get pregnant on my own without any help, and then decided, after that, that I needed to go forward with more treatment