পিঁপড়াকথন!

পিঁপড়া, আশ্চর্য ক্ষুদ্রতম এক প্রানী। মনে করা হয়, তাদের এই ক্ষুদ্রতম মস্তিষ্কে অবাক করা বুদ্ধির সমাহার রয়েছে। আচার-আচরন, খাদ্যাভ্যাস সব কিছুতে তারা অত্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলে। তাই আজকে এই বিষ্ময়কর প্রানীদের কিছু বিষ্ময়কর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছি, চলুন দেখে আসি।

পিঁপড়া খুবই সঙ্গীপ্রবন প্রানী। তারা দলগত চলাফেরা করতে পছন্দ করে। এটার পেছনে দায়ী হলো ‘ফেরোমন’। পিঁপড়ার শরীরের পেছন দিকে হুলের ঠিক নিচে থেকে এ হরমোন নিঃসরিত হয়।  সঙ্গীকে আকর্ষন করতে ফেরোমন হরমোন মূল ভূমিকা পালন করে। তারা চলার সময় হুলের নিচ থেকে হরমোন নিঃসরন করে। পেছনের পিঁপড়া তখন সে ঘ্রান গ্রহন করে সামনের জনের পথ ধরে চলে। এক পিঁপড়া হারিয়ে গেলে তার দলের সন্ধান পাওয়ার জন্য ফেরোমন নিঃসরন করে, ফলে বাকীদের কাছে তার খবর পৌঁছে যায়।

অন্যান্য প্রানীর মতো পিঁপড়ার ও ডাক আছে। শুনতে অবাক লাগছে?? সত্যজিৎ রায়ের এক গল্পে দেখানো হয়েছিল এমন- প্রফেসর শঙ্কু মাইক্রোসনোগ্রাফ দিয়ে পিঁপড়ার ডাক শুনছিলেন। সেটা অবশ্য সায়েন্স ফিকশন, তবে আশা করা যায় বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে হয়ত একদিন শুনতে পাওয়া যাবে। বাস্তব হল, পিঁপড়ারা বেশিরভাগ সময় পা দিয়ে পেটের শক্ত খোলসের উপর, কখনও দেহের একাধিক অংশে ঘর্ষনের সৃষ্টি করে। ফলে এক প্রকার শব্দ তৈরি হয়। উদরে বা পেটের অংশে ক্ষুদ্র ক্ষূদ্র স্পাইক বা কাঁটার মতো অংশ দেখা যায়। যা দিয়ে ঘষা দিলে সৃষ্ট শব্দ হবে চিরুনি দিয়ে টেবিলে ঘষা দেওয়ার মতো। এই ক্ষীন শব্দ কখনও কখনও তাদের জন্য সংকেত হিসেবে কাজ করে যেমন- কোথাও আটকা পড়লে বা বিপদে পড়লে। স্যান্ডি নামক এক জাতের পিঁপড়া আছে, যে ডাকলে মনে হবে চড়ুইপাখির কিচিরমিচির হচ্ছে চারিদিক (শক্তিশালী মাইক্রোফোনের রেকর্ড থেকে প্রমানিত)।

 

প্রানীদের মধ্যে কিন্তু খাদ্যগ্রহনের ফলে শরীরে চর্বি জমার প্রবনতা আছে, কিন্তু পিঁপড়ার মধ্যে সেই প্রবনতা দেখা যায় না। অর্থাৎ পিঁপড়ার শরীরে কখনও চর্বি জমতে দেখা যায় না। তার কারন কী? কারন তাদের শারীরিক গঠন প্রক্রিয়া। পিঁপড়াদের পাকস্থলীতে কাঁটা থাকে। ফলে খাদ্য গ্রহনের পর পরিপাকতন্ত্রে যাওয়ার আগেই আলাদাভাবে সংরক্ষন করে। তাছাড়াও তারা পরিমানের বেশি খাবার পরিপাকতন্ত্রে জমা করে রাখে যেন ক্ষুদার্ত হলে সেখান থেকে একটু একটু করে খেতে পারে। অর্থাৎ পিঁপড়ার জীবদ্দশায় সে তার সম্পূর্ন খাদ্য ক্যালরি শারীরিক ও অভ্যন্তরীন কাজে ব্যয় করে বিধায় শরীরে চর্বি জমে না, তাই মোটা ও হয় না।

 

মানুষের মতো পিঁপড়া জাতির ও কিছু নীতি আছে। একটি পিঁপড়া সর্বদা তার সামনের পিঁপড়াকে অনুসরন করবে, তা সে যেই পথ দিয়েই যাওয়া লাগুক না কেন। তবে সৈনিক পিঁপড়া (Army Ant) অন্যান্য পিঁপড়াদের তুলনায় একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, যা রীতিমতো সবাইকে অবাক করে দেয়! এই পিঁপড়ারা দলগত থাকতে পছন্দ করে, সাথে শত্রুর মোকাবেলা করতেও সর্বদা প্রস্তুত। তবে বিপর্যয় শুরু হয় যখন তারা বৃত্তাকার চলতে থাকে। প্রত্যেক জন তার আগের জনকে অনুসরন করতে তাকার কারনে বৃত্তাকার অবস্থায় তারা চলমান থাকে ফলে ক্লান্তি ভর করলেও থামতে পারে না। দুঃখের বিষয়, এভাবেই হাজার হাজার পিঁপড়া মারা যায় এই বৃত্ত ঘূর্ননের মধ্যেই!

সব কিছুর মধ্যে একটা বিষয় হচ্ছে, পিঁপড়াদের মধ্যে যে একতা ও বন্ধুত্ব দেখা যায়, তা মানুষের জন্য শিক্ষনীয়। যদি এমন ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা তৈরি হয়, তবে পৃথিবীটাও সুন্দর হয়ে উঠবে!

Writer,

Somaiya Afrin Eva Khondokar

Intern, Content Writing Department

Requin BD

16 Comments

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *