বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের অধিকাংশ রূপ ও স্বাদ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি এবং সম্প্রদায়ের সাথে গভীরভাবে জড়িত।বাংলাদেশ, একটি সুন্দর দেশ, যেখানে ঐতিহ্যবাহী খাবার একটি গৌরবশালী অংশ গুলিয়ে আছে। এই ব্লগে, আমি আপনাকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে জানাতে চলেছি, যা এই দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং রুচির জগতে এক নতুন দিক দেয়।
রাইস এন্ড ডাল: সুপ্রভাত সকালের স্বাদ বাঙালির জন্য সকালের প্রথম খাবার হলো রাইস এন্ড ডাল। আমদের মূল আহারের অংশ হিসেবে রাইস এবং ডাল হয়ে থাকে, এবং এটির সাথে সবচেয়ে চমৎকার স্বাদের সবজি বা মাংস আসে। বাংলাদেশে, ঢাকা বিরিয়ানি এবং খিচুড়ি এই প্রধান রাইস ডিশগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
মাছ এবং শুঁটকি: সমৃদ্ধির আর্থিক চিহ্ন বাংলাদেশ একটি নদীবাসী দেশ, এবং এখানে মাছ এবং শুঁটকি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইলিশ, রুই, কাতলা, পুঁটি, কোই, বই, এই সবগুলি মাছের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া, শুঁটকি বা শ্রিম্প বাংলাদেশের মাছ ও শাঁসের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সহজ খাবার। গ্রামীণ জনগণ তারা এই শুটকি মাছ খেতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ এটি খুব সহজেই তারা রোদে শুকিয়ে তৈরি করতে পারে। এজন্য এটি গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার।
পান্তা: পান্তা ভাত বাংলাদেশের গ্রাম জীবনের একটি মানপর্যাপ্ত খাবার যা সাধারণভাবে ধানের চাল দিয়ে তৈরি হয়। পান্তা ভাত গ্রাম বাংলার একটি অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী খাবার ।এটি সভ্যতার অনেক আগে থেকেই বাংলার গ্রাম গুলোতে পান্তা ভাতের চাহিদা অনেক বেশি দেখা যায়। সাধারণত পান্তা ভাত তৈরি হয় মানুষের বেঁচে যাওয়া ভাতের সাথে পানি দিয়ে সারারাত্রে রাখার পর যে ভাত হয় সেটাই হলো পান্তা ভাত। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ সকালে মাঠে কাজ করতে যাওয়ার আগে এই পান্তা ভাত সাধারণত তারা ভক্তি সহকারে খেয়ে থাকে ।পান্তা ভাতের সাথে একটি কাঁচা মরিচ ও কাঁচা পেঁয়াজ কাটা বা ডিম ভাজি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। বর্তমানে 2000 সালের পর থেকে বা ২০০৫ সালের পর থেকে গ্রামবাংলায় পান্তা ভাতের চাহিদা কমতে দেখা যায়।
চিতই পিঠা: চিতই পিঠা, এটি একটি প্রসিদ্ধ বাঙালি পিঠা, যা বিশেষভাবে পৌষ পার্বণ্যে (মাঘ বা পৌষ মাস) তৈরি করা হয়। এই পিঠাটির মূল উপকরণ হলো চালের গুঁড়ি, দুধ, কন্ডেন্সড মিল্ক, গুড়ি এবং নারিকেলের স্বাদ। একটু অন্যভাবে বললে বলা যায় শুধু চিতই পিঠা না গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে যে কোন পিঠাই অনেক বেশি চাহিদা সম্পন্ন ।তার কারণ হচ্ছে সারা বছর মাঠের কাজ করে ফসল কেটে যখন চাল বা গুঁড়া তৈরি হয় ,তখন গ্রামীণ মানুষ তাদের পিঠা উৎসব শুরু করে ।তারা সমস্ত বছর কাজ করার পর তারা যেকোনো ধরনের পিঠা তৈরিতে অনেক বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। এবং সেটা তারা নিজেরা খায় এবং প্রতিবেশী দের সাথেও সেটা ভাগাভাগি করে আনন্দ উপভোগ করে।
হাসের মাংস ও ছিটেরুটি: হাসের মাংস ছিটে রুটি একটি বিশেষ ধরনের খাবার, যা প্রধানত বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত। এই খাবারে হাসের মাংস (মুরগি বা ডাকের মাংস) স্বাদিষ্ট স্পাইসি মসলা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে হাঁসের মাংস ও ছিটে রুটি অনেক বেশি জনপ্রিয় ।তার কারণ হচ্ছে গ্রামীণ বাংলার জনগণের বাড়িতে যখন কোন আত্মীয়দের আগমন ঘটে তখন তাদেরকে প্রথম দেওয়া হয় হাঁসের মাংস ও ছিটে রুটি ।সেই জায়গা থেকে যদি দেখা হয় তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় এই খাদ্য টি কত বেশি জনপ্রিয়।
ভর্তা: স্বাদের মজা বাঙালির জন্য ভর্তা খুব গুরমেজের খাবার। এই খাবারে সবজি, মাংস, শুঁটকি, ইলিশ, বাঁধাকোপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি বাজারে ভর্তা দেওয়া হয়, এবং এটি আমাদের বাংলাদেশী আহারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মিষ্টি: মিষ্টির দেশ বাংলাদেশের মিষ্টির জগত অত্যন্ত বিশেষ। সন্দেশ, রসগোল্লা, চমচম, মিস্টি দোই, এই সবগুলি মিষ্টি বাংলাদেশের লোকের মন জিতে দেয়। বিশেষ করে ঈদ, পোহেলা বৈশাখ, এবং স্পেশাল অক্ষয় তৃতীয়া দিনে মিষ্টি খেতে লোকের প্রিয় কাজ।
পিঠা (Pitha): পিঠা বাংলাদেশের গ্রাম জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং পাঁচালি উৎসবের সময় অত্যন্ত প্রচলিত। পিঠা তৈরির জন্য চাল, দুধ, গুড়ি, নারিকেল, গুঁড়ের স্বাদ ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার হয়। গ্রামের মানুষ যে কোন অতিথিকে আপ্যায়ন করার জন্য পিঠার ব্যবস্থা করে থাকে। আবার যে কোন তিথিতেও পিঠার ব্যবস্থা করে।
রুই মাছের কারি: বাংলাদেশের মাছ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসেবে পরিচিত, এবং রুই মাছের কারি একটি জনপ্রিয় খাবার সম্পর্কে। এটি স্পাইসি মসলা দিয়ে তৈরি হয় এবং রুই মাছের মধ্যে স্বাদে প্রচুর মজা দেয়। রুই মাছের কারি সাধারণত গ্রাম্য মানুষের দৈনন্দিন খাবার ।তারা খাবারের সঙ্গে ঝাল পছন্দ করে ,একটি খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন রকম মসলা ও ঝাল ব্যবহার করে রান্না করা হয় ।এটি গ্রামবাংলার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার ।
খিচুড়ি: খিচুড়ি বাংলাদেশের একটি প্রমিনেন্ট ঐতিহ্যবাহী ডিশ, যেখানে চাল এবং ডালের মিশ্রণ স্বাদিষ্ট মসলা এবং সবজির সাথে পরিবেশন করা হয়। খিচুড়ি গোটা বাঙালি সম্প্রদায়ের উৎসবে প্রধান খাবারের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। খিচুড়ি একটি জনপ্রিয় খাবার বাংলাদেশের যে কোন স্থানের মানুষের জন্য। বিশেষত যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের জন্য খিচুড়ি সব থেকে বেশি সহজে রান্না করার একটি উপায়। এটি সাধারণত বৃষ্টি হইলে আবহাওয়া ঠান্ডা হলে বাংলার ঘরে ঘরে রান্না হতে দেখা যায়। খিচুড়ি ও বাংলার মানুষের কাছে অনেক প্রিয়।
ইলিশ ভাজি: ইলিশ বাংলাদেশের সম্প্রদায়ের খাবারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং ইলিশ ভাজি একটি জনপ্রিয় রোপ্যাল খাবার। ইলিশ মাছ স্পাইসি মসলা দিয়ে মোটা মোটি ভাজা হয় এবং এটি খেতে অত্যন্ত স্বাদিষ্ট।
মাটন কুর্মা: মাটন কুর্মা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী মাংসের ডিশ, যেখানে মাটনের মাংস স্পাইসি গ্রেভি এবং স্বাদিষ্ট মসলা দিয়ে তৈরি হয়। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে মাটন কোরমা রান্না করার জন্য তারা নারকেলের সাদা অংশ ব্যবহার করে থাকে। নারকেলের সাদা অংশকে গ্রাম বাংলার ভাষায় নারকেলের দুধ বলা হয়। ব্যবহারের ফলে মাংসের এক অন্যরকম সদৃষ্ঠ অনুভব করা যায়।
শাক সবজি: দেশের গ্রামগুলোতে অনেক বেশি মাঠ এলাকা থাকার কারণে সেখানে বিভিন্ন ধরনের সুপেয় ও সদৃষ্ঠ শাকসবজি পাওয়া যায় যেটা গ্রাম বাংলার মায়েরা খুব সহজেই কড়াইতে ভেজে এক নতুন স্বাদ প্রদান করতে পারে ।বর্তমানের এগুলো দেখা না গেলেও অনেক আগের মায়েরা খুব সহজেই বাজার থেকে তরকারি আনা না হলে তারা এই শাকসবজি মাঠ থেকে তুলে এনে রান্না করত।এবং সেগুলো অনেক সাধের ও স্বাস্থ্য কর হতো।
এই ব্লগ দিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের এক ছোট পর্দা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই সুন্দর দেশের ঐতিহ্যবাহী রুচির জগত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এই স্পেশাল খাবার জগতে আপনি নিজেও একবার যান এবং স্বপ্ন পুরন করুন।
Writer
Md Ashikur Rahman
Intern, Content Writing Department
Requin BD
Write a Comment