আমাদের বর্তমান যুগের আধুনিকীকরন সাথে সাথে হয়নি। এর পেছনে চলে গেছে আরও দুই যুগ- প্রাচীন ও মধ্যযুগ। যুগের সাথে সাথে হয়েছে সভ্যতার প্রবর্তন। তেমনি রয়েছে রহস্যেঘেরা এক সভ্যতা – ‘মায়া সভ্যতা’। সভ্যতার নামটি কিন্তু আসলেই মায়াজালে ঘেরা। চলুন তবে ঘুটে আসি সেই মায়াজালের অভ্যন্তরে!
প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে যে পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, সকল প্রজাতির অস্তিত্ব ধূলায় মিশে যাবে। এর উপর ভিত্তি করে ২০০৯ সালে হলিউডে “2012” নামে সিনেমাও তৈরি হয়েছিল। তবে আপনারা হয়ত জেনে অবাক হবেন, এই সিনেমার সাথে জড়ানো আছে মায়া জাতির এক অজানা ভবিষ্যদ্বাণী। আসলে জাতি হিসেবে তারা কেমন ছিলো- উন্নত, অসভ্য নাকি বর্বর? এ বিষয়ে যদিও স্পষ্ট কারও জানা নেই, কারন সেই সভ্যতার রাজত্ব ছিল খিষ্টপূর্ব ২০০০ সালে, যা বর্তমান হিসাবে প্রায় ৪০০০ বছর আগের কথা আরকি! মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার আদিবাসীদের দ্বারা প্রথম মায়া সভ্যতার স্থাপনা ঘটে। তাদের পুঁথি রচনা হতো হায়ারোগ্লিফিক্সে। যেটি প্রাক-কলোম্বিয়ান আমেরিকার একমাত্র লিখিত পদ্ধতি (রূপান্তরিত), সাথে ছিল ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা তৈরির প্রচলন। ৪০০০ বছর পূর্বে হলেও সেই সময়ে তারা সময় থেকে এগিয়ে অনেক কিছু করেছে।
মায়া বা মায়ান সভ্যতা- শব্দটি কিন্তু বাংলা থেকে পুরোপুরি আসেনি। “মায়াপান” নাম থেকে এর জন্ম, যার রয়েছে ‘ইউকাতান’ নামক প্রাচীন শহর। ইউকাতান ছিল পোস্ট-ক্লাসিক সময়ের মায়ান সাম্রাজ্যের শেষ রাজধানী, যার সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০-২৫০ পর্যন্ত। তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে Quiche in the South or Yucatec in the North হিসেবে। জন লয়েড স্টিফেন্স ও ফ্রেডরিক ক্যাথারউড নামক দুইজন ব্যক্তি মায়ান সভ্যতার আবিষ্কার করেন ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে। একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড জুড়েই ছিল তাদের আবাস, খন্ড-বিখন্ড আকারে ছড়িয়ে ছিল না। তাদের বসতি ছিল প্রায় ১০০০ কিলোমিটার বিস্তৃতিতে।
সভ্যতার রহস্য উন্মোচনে অনেক স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক শিল্পের সন্ধান পাওয়া যায়, যা মায়ান বা মায়া সভ্যতার অবদান। আরও আবিষ্কৃত হয় বিভিন্ন মন্দির, প্লাজা, প্রাসাদ, পিরামিড এবং মায়া সংস্কৃতি ও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কোর্ট, যা খেলার প্রধান ক্ষেত্র ছিল। প্রথমে যখন ফলক ও পান্ডুলিপির আবিষ্কার হয়, চারিদিকে কৌতুহলের তুমুল ঝড় বয়ে যায়। নৃতত্ত্ববিদদের গবেষনা ও অনুসন্ধান এনে দিল তার বিশদ বিবরন। ভেবে দেখুন, তখনকার সময় পাকা বাসস্থান নির্মানের কথা চিন্তা করা যেত না, অথচ তারা ২৫-৩০ তলার স্থাপনা নির্মান করে ইতিহাসের পাতায় প্রবল বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন রেখে গেছে। তখন মনে একটাই প্রশ্ন জাগে, এসব কীভাবে সম্ভব? তাঁদের মধ্যে কী এমন কোনো বিশেষ বস্তু ছিল যা তাঁদেরকে সবার থেকে এগিয়ে রেখেছে?
সালভেদরের উত্তরাংশ, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাস, সেন্টাল মেক্সিকোর তাবাস্কো আর চিয়াপাসহ তাদের বিস্তৃতি বিদ্যমান ছিল। সবাই একসাথে থাকার কারনে শত্রুপক্ষ আক্রমন করে তেমন সুবিধা পেত না, ফলে তাদের সুরক্ষা নিয়ে বেশি চিন্তাও হতো না। মায়া জাতির সম্পর্কে অনেকে মনে করে তারা হারিয়ে যাওয়া রহস্যে ঘেরা জাতি। কিন্তু মূলত তারা হারায়নি। তাদের বংশধরেরা যে যে শহর স্থাপন করেছিল, সেগুলো এখনও সেখানেই বিরাজমান। ১০০০ বছর আগের রীতিনীতি গুলোর পরিবর্তিত রূপ এখনও সেই স্থানীয়রা অনুসরন করে। মায়াদের তৈরিকৃত শহরগুলো হলো- চিচেন ইত্জা, বোনামপাক, উক্সমাল ও আলতুন হা। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে বা অ্যান্নো ডমিনির ষষ্ঠ শতকের কাছাকাছি সময়ে শৌর্য, বল এবং প্রভাবে সকলের কাছে সমাদৃত হয়ে উঠেছিল। তবে এদের নাটকীয় পতনের কারনে আজও সবার মাঝে বিতর্কিত হয়ে আছে। তাদের সবচেয়ে বড় বড় পাথরের নগরী গুলো ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। জানা যায় তাদের সাম্রাজ্যে জনবসতির সূত্রপাত ঘটে খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ বছরে। তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনেক বৈশিষ্ট্যই এসেছে ওলমেক সভ্যতা থেকে। ক্যালেন্ডারের উৎপত্তিতেও ছিল ওলমেক সভ্যতার আভাস!
মায়ার সভ্যতার বিলুপ্তি নিয়ে নিশ্চিত না থাকলেও কয়েকটি বিষয় ধারনা করা হয়। জনসংখ্যা বিষ্ফোরন, যেটি মায়ার পরিবেশের সাথে মানানসই ছিল না। সেই কথার সূত্র ধরেই পন্ডিতগণ ধারনা করেন, তদের নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দে মায়া সভ্যতার পতন ঘটে। আবার ধারনা করা হয়, পরিবেশের বিপর্যয় মায়া সভ্যতার ইতি ঘটায়। স্প্যানিশরা আক্রমন করার আগেই মায়ান সভ্যতা সবুজ বনাঞ্চলের নিচে চাপা পড়ে যায়। হয়তোবা তিনটির মিলিত কারনই ছিল এই সভ্যতার করুণ পরিনতি।
Writer
Somaiya Afrin Eva Khondokar
Intern, Content Writing Department
Requin BD
2 Comments
Md Ashik Karim
March 15, 2023
Great Content. History always amazes me.
Suriya Yeasmin
March 16, 2023
কিছু অজানা বিষয় জানতে পারলাম। ধন্যবাদ এমন নতুন জানানোর জন্য।