মেটাভার্সঃ বাস্তব জগতের সাথে আদৌ সম্পর্কিত?

সম্প্রতি ফেসবুক এক নতুন নামে সবার সামনে উপস্থিত হয়েছে, যার নাম “মেটা”। আগে যেমন Root Company হিসেবে ফেসবুক ছিল, এখন সেখানে Meta জায়গা দখল করে নিয়েছে। অনেকের ধারনা ফেসবুকের নাম পরিবর্তন ছাড়া আর নতুন কিছু হয়নি, যেখানে Mark Zuckerberg সবার জন্য নিয়ে এসেছে বিরাট সারপ্রাইজ! সারা দুনিয়া এই বড় চমকের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

২০২১ এর নভেম্বরে, মার্ক জাকারবার্গ এক বিষ্ফোরন ঘটিয়েছেন, যেটি একুশ শতকের উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটি। মেটা-র উদ্ভাবকের ভাষায়- “Metaverse is the successor of Internet”. মেটা-র অধীনে শুধু  ফেসবুক নয়, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও রয়েছে। তবে মেটাভার্স শুধু এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তৈরি করছে ভার্চুয়াল দুনিয়া, যেন বাস্তবের প্রতিচ্ছবি! বিষয়টা সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হলেও বাস্তবে এর দেখা মিলবে। বলা হয়, মেটাভার্সই হবে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ!

আপনি তরুন প্রজন্মের কথা ভাবলেই বুঝবেন, ভার্চুয়াল ও বাস্তব দুনিয়া এখন যেন এক সুতোয় বাঁধা। মেটাভার্সের কারনে ভার্চুয়াল জগতে যেমন বাস্তবতার দেখা মিলবে, তেমনি সেখানে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে বহুমাত্রিক। এর ফলে শুধু দেখা নয়, অনুভব করাও সম্ভব হবে। সেখানে আপনার একটি এনিমেটেড কপিও খুঁজে পাবেন, চাইলে বন্ধু বা আত্নীয়কে ইনভাইট করা যাবে। প্রোফাইল পিকচারের মতো আপনার “ত্রিমাত্রিক অবতার” আপনারই প্রতিনিধিত্ব করবে। চাইলে গেম খেলার জন্য, ভ্রমনের জন্য, আড্ডা দেবার জন্য একাধিক কপিও তৈরি করা যাবে। আবার, ভার্চুয়াল বাড়ি তৈরি করে নিজের ইচ্ছামতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। বাস্তব দুনিয়ার মতো সেখানে কেনাবেচাও হবে। ভেবে দেখুন তো, আপনার অনুভূতি কেমন হতে পারে!?

 

মেটাভার্স নিয়ে মানুষ এতটাই আশাবাদী যে, সেখানে প্রতিনিধিত্ব করতে নিজেদের জায়গা দখলে হয়ে উঠেছে তৎপর। সেরকম আগ্রহী এক ব্যক্তি ভার্চুয়াল এই দুনিয়ায় জমি কিনতে ১২ মাসে খরচ করেছে ১৯৩ কোটি ডলার। শুনতে হাস্যকর হলেও এই অদ্ভুত কাজটি করেছে অ্যান্জি টমসন নামের একজন যুক্তরাষ্ট্রীয় নাগরিক। তার Avatar বাস্তব বাড়িওয়ালাদের চেয়ে বৈচিত্রময়। বিবিসির এক অনুষ্ঠানে সে জানায়- “দেড় হাজার পাউন্ড দিয়ে আমি আমার প্রথম মেটাভার্স পার্সেল কিনেছি ২০২০ সালের জুলাই মাসে। সেখানে নিজের কাজ তুলে ধরার জন্যই কিনেছিলাম।” শুধু নিজের কাজ নয়, বরং অন্যের প্রতিভাকে তুলে ধরাও তার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানা গেছে টমসনের মন্তব্যে। ইতোমধ্যে তিনি ডিজিটাল শিল্পকর্মের দুটি গ্যালারি বানিয়েছেন। “ভক্সেলস” নামক মেটাভার্সের গ্যালারি থেকে টমসন শিল্পকর্ম বিক্রিও করছেন, যার বিনিময় মুদ্রা “ক্রিপ্টো”।

সাধারনভাবে সবার কাছে মেটাভার্সকে নরমার ভিআর বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মনে হতে পারে, কিন্ত এটি তার চেয়েও এগিয়ে। কারো কারো মতে, মেটাভার্সের তুলনা বর্তমান এন্ড্রয়েডের সাথে আশির দশকের মোবাইল ফোনের তুলনার মতো। ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে মনে করায় প্রযুক্তিবিদরা এর উন্নতির কাজে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ফোর্টনাইটের এক ভার্চুয়াল কনসার্টে আরিয়ানা গ্রান্ডে গান পরিবেশন করেন যাতে অংশ নেয় কয়েক লক্ষ মানুষ, এপিক গেইমসের পক্ষ থেকে জানা যায়। তাই ইউরোপে এ প্রযুক্তির কাজে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের কথা ঘোষনা করেছে ফেসবুক। বিনিয়োগের পরিমান প্রচুর। এজন্য তারা তৈরি করেছে অক্যুলাস হেডসেট যা বাকী প্রোডাক্টের তুলনায় দামে কম। তাই ফেসবুকের প্রায়োরিটি লিস্টের সবার উপরে আছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত মেটাভার্স। ধারনা করা যায়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠা হবে।

 

আরও ভালো বিষয় হচ্ছে- মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগোল, ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেমস কোম্পানিও মেটাভার্সের কাজে সাহায্য করছে, বিনিয়োগের পরিমান কিন্তু কম নয়। এজন্য তারা তৈরি করছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম “সুপার কম্পিউটার”। গত কয়েক বছরে অনেক উন্নতিও ঘটেছে, দর্শন ও শ্রবনের পাশাপাশি মানুষের অনুভূতির কাছাকাছি পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তাই আশা রাখতে পারি, আগামী কয়েক বচর পর আমরা মেটাভার্সের জগতেও সমান তালে বিচরন করতে পারব।

Writer,

Somaiya Afrin Eva Khondokar

Intern, Content Writing Department

Requin BD

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *