শ্বেত বিবরঃ মহাজগতের অজানা বিষ্ময়
মহাবিশ্বের সবকিছুই রহস্যময়। এর পরিধির যেমন সীমারেখা নেই, তেমনি রহস্যেরও কোনো কমতি নেই। আমরা সবাই কমবেশি কৃষ্ণ বিবর বা Black Hole এর সম্পর্কে শুনেছি। তবে কৃষ্ণ বিবর ছাড়াও রয়েছে “শ্বেত বিবর” ও “ক্ষুদ্র বিবর” নামক দুটি গহ্বর , যা White Hole ও Wormhole নামে পরিচিত। বর্তমানে , Black Hole এর মতো White Hole বিজ্ঞানীদের কাছে আরেক বিষ্ময়ের নাম, যার অনুসন্ধান এখনও চলমান!
এ বিষয়ে জানার আগে প্রথমে আমাদের জানতে হবে, শ্বেত বিবর কী? এটি মূলত মহাবিশ্বের তাত্ত্বিক অংশ, অর্থাৎ এর কোনো বাস্তবিক অস্তিত্ব এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্ল্যাকহোলের বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি এটি সাধারন আপেক্ষিক তত্ত্বের সূত্রগুলোর একটি সম্ভাব্য সমাধান। উক্ত তত্ত্বানুসারে, যদি মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে হোয়াইট হোলেরও থাকা উচিত। শুধুমাত্র গানিতিক সম্ভাবনার মাঝে আবদ্ধ মনে হলেও নতুন গবেষনার মতানুসারে, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি তত্ত্ব যদি সত্যি হয় তাহলে হোয়াইট হোলের অস্তিত্বও সত্যি হতে পারে- এমনকি আমরা দেখতেও পারব। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী সিন ক্যারলের হোয়াইট হোল সংজ্ঞানুসারে, “ব্ল্যাকহোল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ একবার গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না; হোয়াইট হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখান থেকে কেউ একবার বের হলে আর সেখানে ফিরে যেতে পারবে না”। কৃষ্ণ বিবর মূলত সবকিছু নিজের মধ্যে শোষন করে নেয়, আর শ্বেত বিবর সবকিছু বাইরে বের করে দেয়। তাই এটি উজ্জল প্রকৃতির। যদি সময়কে বিপরীত দিকে চালনা করা যায়, তবে কৃষ্ণ বিবরকে শ্বেত বিবর মনে হবে। উক্ত প্রক্রিয়াকে ” Time Reversal of Black Hole” বলা হয়। এটিকে “Hypothetical Star” হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়।
পদার্থবিজ্ঞানের কিছু তত্ত্বে হোয়াইট হোলের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ব্ল্যাকহোলে শোষিত বস্তুগুলো কোথায় নির্গত হয়, সেই ধারনা থেকে হোয়াইট হোলের জন্ম। শক্তি সংরক্ষনশীলতা নীতি অনুসারে, মহাবিশ্বে শক্তির রূপান্তর ঘটে, সৃষ্টি বা বিনাশ ঘটে না। এই নীতি মোতাবেক, ব্ল্যাকহোলের বস্তুগুলো এমন কোথাও যায়, যা আমাদের এ মহাবিশ্বেই বিদ্যমান। অন্য মহাবিশ্বে গেলে তা শক্তি সংরক্ষনশীলতার নীতিবিরুদ্ধ হবার পাশাপাশি মহাবিশ্বের ভরের ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটাবে, যা অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন, পজিটিভ গ্র্যাভিটির চাপে যেমন কৃষ্ণ বিবরের শোষনক্ষমতা প্রকাশ পায়, তেমনি নেগেটিভ গ্র্যাভিটির চাপে শ্বেত বিবরের উদগীরনক্ষমতা প্রকাশিত হয়।
হোয়াইট হোলের উদগীরন বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় একটি প্রশ্ন আসতে পারে, বিগ ব্যাং তত্ত্বের সাথে হোয়াইট হোলের কোনো যোগসাদৃশ আছে কি? বিগ ব্যাং ধারনা অনুসারে, প্রায় ১৩৭০ কোটি বছর আগে অতি উত্তপ্ত এবং প্রায় অসীম ঘনত্বের এক পুঞ্জীভূত অবস্থা থেকে এক বিশাল বিষ্ফোরনের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছে। ফলে হোয়াইট হোলের বৈশিষ্ট্যের সাথে বিগ ব্যাং ধর্মের অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সে যুক্তিতে বলা যায়, মহাবিশ্বের ভর সময়ের সাথে নবায়িত হতে পারে যা একটি চক্রের মধ্যে পুনঃপুন আবর্তিত হচ্ছে।
পূর্বের কিছু গবেষনা বলে, কোনো বস্তু ঘূর্ণনশীল ব্ল্যাকহোলে পতিত হলে তা ওয়ার্মহোলের সাথে যুক্ত হয়, যা হোয়াইট হোলের সাথে যুক্ত হওয়ার পথ সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, হোয়াইট হোলের শেষপ্রান্তে আলো আছে। আরেক ভাষ্যমতে, “শক্তির ঘনত্ব এবং বক্রতা সেখানে এত বেশি যে, চিরায়ত গ্র্যাভিটি দিয়ে ব্যাখা করা যায় না সেখানে কী ঘটছে। হতে পারে, গ্র্যাভিটির আরো কোনো নতুন মডেলই পারবে এই অস্থায়ী অপারগতা দূর করতে এবং হোয়াইট হোলের ব্যাখা প্রদান করতে”। সম্ভবত ২০০৬ সালে শ্বেত বিবর পর্যবেক্ষনের ঘটনা ঘটেছিলো যখন বিজ্ঞানীরা হঠাৎ করে শূন্য হতে বিপুল পরিমান সাদা আলোর বিস্ফোরণ হতে দেখেছিলেন এবং তা পুনরায় শূন্যে মিলিয়ে গিয়েছিলো। তবে সে পর্যন্ত এধরনের আর কোনো ঘটনাই তাঁরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন নি ফলে নতুন কোনো তথ্যও পাওয়া যায় নি এই বিষয়ে। দশ বছর আগের সেই ঘটনাটির মতো আরেকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ না করা পর্যন্ত কেবল অপেক্ষাই করে যেতে হবে। ২০১৪ সালের একটি নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী একটি সিমুলেশন চালানো হয়, যেখানে দেখা যায় কৃষ্ণ বিবরের জীবনের শেষ পর্যায়ে এটি একটি শ্বেত বিবরে পরিণত হচ্ছে এবং যেই বস্তুগুলো এতদিন শোষন করে নিয়েছিলো সেগুলো আবার বের করে দিচ্ছে।
প্রায়ই আমরা কৃষ্ণ বিবরের ব্যাপারে কথা শুনি যায় অথচ শ্বেত বিবরের কথা তেমন শুনি না কেন? প্রকৃতপক্ষে, শ্বেত বিবর নিয়ে তাত্ত্বিকভাবে বিভিন্ন যুক্তি উত্থাপন করা গেলেও বাস্তবিকভাবে বিজ্ঞানীরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি। আরেকটি বিষয় হলো, সময়কে শুধু অতীত থেকে ভবিষ্যৎমুখেই প্রবাহিত হতে দেখা যায়। কিন্তু আপেক্ষিকতা অনুযায়ী ঋনাত্মক দিকেও সময় অতিবাহিত হলে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। তাই যদি কখনো শ্বেত বিবর তৈরি হয়েও যায়, তা হবে খুবই অস্থিতিশীল এবং মূহুর্তের মধ্যেই রূপান্তরিত হয়ে কৃষ্ণ বিবরে পরিণত হয়ে যাবে।
Writer
Somaiya Afrin Eva Khondokar
Intern, Content Writing Department
Requin BD
1 Comments
Suriya Yeasmin
June 10, 2023
It’s really great information.